লাইলাতুল কদর লাভে আজকের রাতের করণীয়

চলছে ২৬ রমজান। আজ সন্ধ্যা থেকেই শুরু হবে বহুল আকাঙ্ক্ষাতি লাইলাতুল কদরের রাত হিসেবে পরিচিত ২৭ রমজানের রাত। যদিও প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন, ‘শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ কর।

লাইলাতুল কদর লাভে রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফে অংশগ্রহণ কর। তথাপিও মুসলিম উম্মাহর কাছে ২৭ রমজানের রাতের এক বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। শবে কদর আগে পরে যেদিনই হোক মুসলিম উম্মাহ ২৭ রমজানের রাতে সবচেয়ে বেশি ইবাদত বন্দেগি করে থাকে। আবার এ রাতে লাইলাতুল কদর পাওয়ার সম্ভাবনাও কম নয়।

সারা দুনিয়ার মুমিন মুসলমান এ রাতকেই লাইলাতুল কদর ভেবে সারা রাত জেগে থাকে। নামাজ, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল, কুরআন তেলাওয়াতসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগিতে সারারাত কাটিয়ে দেন।

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর জন্য এ রাতের কিছু করণীয় সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

>> লাইলাতুল কদর সন্ধান করা
পবিত্র লাইলাতুল কদরের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো রাতকে নির্ধারণ করা না হলেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতে ‘লাইলাতুল কদর’ তালাশ কর। আর আজ যেহেতু বেজোড় রাত। সে হিসেবে অনেকে আলেম ও বুজুর্গ ব্যক্তি এ রাতকে লাইলাতুল কদর হওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন। তাই আজকের রাতে লাইলাতুল কদর লাভে বেশি বেশি ইবাদত করা আবশ্যক।

>> কুরআন-সুন্নাহর অনুসরণে ইবাদত করা
মুসলিম উম্মাহর জীবন পরিচালনা গাইড ও সংবিধান পবিত্র কুরআনুল কারিম আজকের রাতেই নাজিল হয়েছে। আর তা ছিল ২৬ রমজান দিবাগত রাত তথা ২৭তম রাত। এ কারণে লাইলাতুল কদরের মর্যাদা এত বেশি।

এ রাতে কুরআন নাজিলের সম্মানার্থে আল্লাহ ঘোষণা দিলেন- ‘লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সুতরাং কুরআন নাজিলের রাতে কুরআনকে বাস্তবজীবনে বাস্তবায়ন করার অঙ্গীকার গ্রহণের পাশাপাশি বিশ্বনবির সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বাস্তবায়ন করাই হবে লাইলাতুল কদরের সেরা প্রাপ্তি।

>> গোনাহ মাফ চাওয়া
এ রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আল্লাহর নিকট গোনাহ মাফের দোয়া শিখিয়েছিলেন। তাই উম্মতে মুহাম্মাদির উচিত প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়ার মাধ্যমে গোনাহ মাফের জন্য তাওবা করা। দোয়াটি হলো-

اَللَّهُمَّ اِنَّكَ عَفُوُّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُوْ عَنَّا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ`ফুওয়ুন; তুহিব্বুল আ`ফওয়া; ফা`ফু আন্না।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালো বাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

>> কল্যাণের আবেদন
লাইলাতুল কদর যেহেতু হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম রাত। তাই বান্দার জন্য এ রাতের হক বা অধিকার হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের পাশাপাশি মানুষের দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তির আবেদন-নিবেদন আল্লাহর দরবারে পেশ করা। যাতে এ রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য সর্বোত্তম ভাগ্য নির্ধারণ করেন। দুনিয়ার যাবতীয় কল্যাণ দান করেন।

>> কাযা নামাজ আদায় করা
মানুষের জীবনে কারণে অকারণে অসংখ্য ওয়াক্ত নামাজ ছুটে যায়। তাদের জন্য নামাজ কাযার সূবর্ণ সময় পবিত্র লাইলাতুল কদর।’ কারণ আল্লাহ তাআলার ঘোষণা, লাইলাতুল কদর হাজার মাসে চেয়ে উত্তম।

এ রাতে যদি কেউ এক ওয়াক্ত নামাজ কাযা আদায় করে তবে আল্লাহর ঘোষণা অনুযায়ী হাজার ওই ওয়াক্তের নামাজের কাযা আদায় হওয়ার কথা। আর এমনটি আশা করে কাযা আদায় করা মুসলিম উম্মাহর জন্য জরুরি।

সুতরাং এ রাতে ন্যূনতম পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ একবার করে কাযা আদায় করা উচিত। আল্লাহ ইচ্ছা করলে এ ওসিলায় বিগত জীবনে ছুটে যাওয়া নামাজগুলোর কাযা আদায়কে কবুল করে ওই বান্দাকে মাফ করে দিতে পারেন।

পরিশেষে…
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে নামাজ, জিকির-আজকার, কুরআন তেলাওয়াত, হাদিস অধ্যয়ন, দান-খয়রাত, মা-বাবার খেদমতসহ ভালো কাজের মাধ্যমে পবিত্র লাইলাতুল কদর আতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।